মুসলিম জনসংখ্যা বৃদ্ধি কীভাবে ভারতকে ধীরে ধীরে বিভক্ত করে চলেছে ।

 


৬১০ খ্রিস্টাব্দে মহাম্মদ-বিন-আব্দুল্লার দ্বারা ইসলামের স্থাপনার পর আরব দখল করার সাথে সাথে ক্রমশ ভারতেও শুরু হয় আরব সাম্রাজ্যবাদী ইসলামিকদের আক্রমণ । আরবের প্রথম খলিফা আবু বকরের নেতৃত্বে তৎকালীন ভারতে শুরু হয় আরব সাম্রাজ্যবাদী মুসলিমদের আক্রমণ । ৬৩৬ খ্রিস্টাব্দে মহাম্মদের মৃত্যুর চার বছর পর মহারাষ্ট্রের থানে নামক স্থানে ভারতে প্রথম ব্যর্থ ইসলামিক আক্রমণ হয় । 

পৃথক আফগানিস্তানঃ-
একদিকে আরবের খলিফাদের নেতৃত্বে মুসলমানেরা ইরাক , ইরান , সিরিয়া  বিজয় করে বর্তমান আফগানিস্তানের হিন্দুদের উপর আক্রমণ করতে শুরু করে , শুরু হয়েছিল তরোয়ালের ভয়ে হিন্দু ও বৌদ্ধদের ধর্ম পরিবর্তন করে মুসলমান বানানোর কাজ , হিন্দুদের মঠ মন্দির ভেঙ্গে মসজিদ তৈরি করা শুরু হয় । গৃহযুদ্ধে লিপ্ত আফগানিস্তানের হিন্দু ও বৌদ্ধদের খুব সহজেই হার মানিয়েছিল আরব সাম্রাজ্যবাদী মুসলিমরা । তৎপশ্চাৎ ইসলামের সৃষ্টির সাড়ে তিনশ বৎসরের মধ্যেই আফগানিস্তানের দারুল ইসলাম (ইসলামিক শাসন) স্থাপনা করেছিল মুসলিমরা । খ্রিষ্টাব্দ ৯৮০ পর্যন্ত
আফগানিস্তানে হিন্দু রাজা জয়পালের শাসন ছিল । যদিও পরবর্তীকালে কোন হিন্দু রাজা রাজত্বে আসেননি তবুও কিছু কিছু জায়গা মধ্যবর্তী সময়ে হিন্দুদের কাছে এসেছিল কিন্তু সেগুলো পুনরায় মুসলমানদের কাছে চলে যায় । অবশেষে ১৭৪৭ সালে আহমেদ শাহ ধুরাণী শাসনকালে মুসলিম বহুল গান্ধার প্রদেশ পৃথক মুসলিম রাষ্ট্র আফগানিস্তান নামে আত্মপ্রকাশ করে । বর্তমানে আফগানিস্তানে প্রায় ৯৯.৭ শতাংশ মুসলিম জনসংখ্যা ।

পৃথক (পশ্চিম) পাকিস্তানঃ-
বর্তমানের পাকিস্তান যা পূর্বে সিন্ধু প্রদেশ , বালুচিস্তান ও পাঞ্জাবে বিভক্ত ছিল । ৭১৫ খ্রিস্টাব্দে আরবের খালিফা মহাম্মদ বিন কাসিমের নেতৃত্বে সিন্ধু প্রদেশে প্রথম ইসলামিক আক্রমণ হয় ও সিন্ধু প্রদেশের রাজা তাহিদ সিং যুদ্ধে পরাজিত হন যদিও পরবর্তী সময়ে সিন্ধু প্রদেশ পুনরায় হিন্দু রাজাদের শাসনে চলে আসে কিন্তু মহাম্মদ বিন কাসিমের আক্রমণের সময় এক বৃহৎ সংখ্যক হিন্দুদের ইসলাম মজহব গ্রহণ করানো হয় । সেই সময় থেকেই বর্তমান পাকিস্তানের বিভিন্ন অঞ্চলগুলিতে বৃদ্ধি পায় মুসলিম জনসংখ্যা । পরবর্তী সময়ে প্রায় ৩০০ বৎসর ইসলামিক আক্রমণ বিহীন থাকলেও ১১-১২ শতাব্দীতে পুনরায় বহুবার ইসলামিক আক্রমণের ফলে ভারতের একটি বৃহৎ অংশ মুসলমানদের হাতে চলে যায় । মারাঠাদের নেতৃত্বে হিন্দু শাসন আসা পর্যন্ত প্রায় সবসময়ই সিন্ধু প্রদেশ মুসলমান শাসকদের অধীনে ছিল । আহমদ বিন কাসিম থেকে শুরু করে মাহমুদ গজনবী , মোহাম্মদ গরি , মোগল , আহমেদ শাহ ধূরাণী পর্যন্ত প্রত্যেক ইসলামিক আক্রমণকারীরা ভারতে এসে প্রথমেই সিন্ধু প্রদেশে আক্রমণ করে ফলে হিন্দু শূণ্য হতে থাকে বর্তমান পাকিস্তান । ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান গঠন হওয়ার সময় ১.৬ শতাংশে এসে পৌছায় হিন্দুদের জনসংখ্যা । 

ভারতে মুসলমানদের দারুল ইসলাম স্থাপনা করার লক্ষ্য পুনরায় ব্রিটিশ শাসনে জন্ম দিয়েছিল । আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্থাপক সৈয়দ আহমেদ খান ১৮৫৭ সালের প্রথম দেশব্যাপী স্বাধীনতা সংগ্রামের পর প্রথমবার দেশভাগের কথা উল্লেখ করে , সৈয়দ আহমেদ খানের চেষ্টাই পরবর্তী সময়ে "দেশভাগ" মুসলিম লীগ ও তৎকালীন ভারতীয় মুসলিমদের এক অন্যতম লড়াইয়ে পরিণত হয় । মুসলিম লীগ গঠনের পর থেকেই ভারতীয় মুসলিমদের মধ্যে বিশেষ করে পশ্চিম পাকিস্তানের ও পূর্ব বঙ্গের মুসলমানদের মধ্যে দেশভাগ করে পৃথক মুসলিম রাষ্ট্র গঠন করার প্রবণতা বৃদ্ধি পেতে থাকে । বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে ভারতের মুসলিমরা যে বিদ্রোহ শুরু করেছিল তার ফলস্বরূপ লক্ষ লক্ষ হিন্দুদের প্রাণ হারাতে হয়েছিল । খিলাফত আন্দোলন ভারতের হিন্দুদের বিরুদ্ধে এক প্রয়োগ ক্ষেত্র হয়ে উঠেছিল , খিলাফত আন্দোলনে ব্রিটিশ সরকারের বিরোধিতার নামে ভারতের চতুর্দিকে হিন্দু গণহত্যা শুরু হয়েছিল । সেই খিলাফত আন্দোলনের সময় কেরলে মোফলা হিন্দু গণহত্যা হয়েছিল । সেই সময় ভারতীয় মুসলিমদের মধ্যে পৃথক মুসলিম রাষ্ট্র গঠনের পৃষ্ঠপোষকতা করেছিল "সারে জাহা সে আচ্ছা" র কবি আল্লামা ইকবাল । যা সময়ের পরিবর্তে মহাম্মদ আলী জিন্নাহ , সোহরাওয়ার্দী খানদের হাতে চলে যায় । অবশেষে কংগ্রেস , মুসলিম লীগ ও ব্রিটিশের ষড়যন্ত্রের ফলে ১৯৪৭ সালে পুনরায় পৃথক মুসলিম রাষ্ট্র পাকিস্তান জন্ম নেয় । 

পৃথক (পূর্ব) পাকিস্তানঃ-
পূর্ব পাকিস্তান বা পূর্ববঙ্গ যেখানে একসময় অনেক স্বাধীনতা সংগ্রামী ও মহাপুরুষ জন্মগ্রহণ করেছিলেন সেই পূর্ববঙ্গ এক সময় মুসলমান বহুল হওয়ার জন্য পাকিস্থানে মিলিত হয় , যা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ রূপে আত্মপ্রকাশ করে ।
১৬ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে মুসলিম মেয়ে বিবাহ করার জন্য কালাচাঁদ রায়কে তৎকালীন ধর্ম গুরুরা সনাতন ধর্ম থেকে বাহির করে দিয়েছিলেন । উল্লেখনীয় যে কালাচাঁদ রায় উনার মুসলমান স্ত্রীকে নিয়ে সনাতন ধর্মে ফিরে আসতে চাইলেও তৎকালীন হিন্দু ধর্মগুরু রা উনাকে সনাতন ধর্মে গ্রহণ করেননি । সেই সুযোগে মুসলমানেরা কালাচাঁদ রায় কে ইসলাম গ্রহণ করিয়ে নেয় । সেই কালাচাঁদ রায় ইসলাম গ্রহণ করার করার পর নিজের অপমানের বদলা নিতে কালাপাহাড় নামে জগন্নাথ পুরীর মন্দির থেকে শুরু করে ডাকেশ্বরী মন্দির পর্যন্ত হিন্দু মন্দির অপবিত্র , ভাংচুর ও হিন্দু গণহত্যার ইতিহাস লিখেছিল । বিশেষত সেই সময় থেকেই পূর্ববঙ্গ ও পশ্চিমবঙ্গের মাটিতে মুসলমান জনসংখ্যা বৃদ্ধি হতে থাকে । মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর নেতৃত্বে মুসলিম লীগ যখন পৃথক ইসলামিক রাষ্ট্র গঠনের পরিকল্পনা করছিল তখন বঙ্গের মুসলিমরাও বৃহৎ আকারে সেই পরিকল্পনায় অংশগ্রহণ করেছিল , যার মূল কারণ ছিল পূর্ববঙ্গ মুসলিম বহুল হওয়া । 
পৃথক মুসলিম রাষ্ট্র গঠনের দাবিতে মুসলিমরা অবিভক্ত বঙ্গের বিভিন্ন স্থানে হিন্দুদের গণহত্যা করেছিল , "নোয়াখালী গণহত্যা" , "গ্রেট কলকাতা কিলিং" উল্লেখনীয় । 
১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে দেশভাগের সময় সেই পূর্ববঙ্গ পূর্বপাকিস্তানে রূপান্তরিত হয় যা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ নামে অন্য একটি মুসলিম দেশ গঠন হয় । দেশভাগের সময় পূর্ব বঙ্গ বা  বাংলাদেশে হিন্দুদের সংখ্যা ছিল ২২ শতাংশ ( বর্তমানে ৮ শতাংশ ) ।


আজ ভারতের যে রাজ্যে মুসলিম জনসংখ্যা সংখ্যাগরিষ্ঠ আছে সেখানে দেশভাগের আওয়াজ প্রত্যেকদিন উঠে । কাশ্মীরের মুসলিমরা জম্মু-কাশ্মীর কে ভারত থেকে পৃথক করে মুসলিম রাষ্ট্র গঠনের জন্য ৭০ বছর ধরে সশস্ত্র যুদ্ধ করে আসছে , ভারতের সবথেকে বেশি শিক্ষিত রাজ্য হওয়া সত্ত্বেও মুসলিম বহুল কেরল পৃথক মুসলিম রাষ্ট্র গঠনের জন্য ক্রমশ আওয়াজ তুলে চলছে , অসম ও পশ্চিমবঙ্গের মৌলবাদী মুসলিমরা বাংলাদেশ , পশ্চিমবঙ্গ ও উত্তর-পূর্ব ভারতকে নিয়ে বৃহত্তর মুসলিম রাষ্ট্র গঠনের পরিকল্পনা করে চলেছে ।
শুধু মুসলিমই নয় পশ্চিমী সভ্যতার অনুগামী হিসেবে ভারতে যারাই আছে তারা ভারত ভাগের স্বপ্ন দেখে চলেছে । 

Comments

Post a Comment

Popular posts from this blog

দক্ষিণ অসমের বরাক উপত্যকার হিন্দু নির্যাতন বাংলাদেশকেও হার মানায়

মুসলিম ও অ-মুসলিমদের মধ্যে ঈর্ষা, দ্বেষ, হিংসা, জিহাদ সৃষ্টি করা কুরাণের আয়াতগুলি